১. শুরুর দিনগুলো
রাকিবের বয়স এখন চল্লিশ ছুঁইছুঁই। একদিন ছুটির দুপুরে বারান্দায় বসে, কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে হঠাৎই তার চোখ চলে গেলো সামনের পুরনো গাছটার দিকে। সেই গাছটা, যেটার নিচে বসে সে একসময় স্বপ্ন দেখত — বড় হওয়ার, কিছু একটা করার, পরিবারকে গর্বিত করার।
তার মনে পড়ে গেলো স্কুলের দিনগুলোর কথা। কত ছোট ছোট ইচ্ছা, বন্ধুদের সাথে খুনসুটি, আর অদ্ভুত রকম একটা আত্মবিশ্বাস— “আমি একদিন কিছু একটা করবো!”
২. ভুল পথে যাত্রা
বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠেই রাকিব একটু বেপরোয়া হয়ে পড়ে। পড়াশোনার চেয়ে আড্ডা, বাইক রাইড, আর “কাজে লাগবে না এসব বিষয়” টাইপ ভাবনাগুলো ওর মন দখল করে নেয়। বাবা-মার আশা যেন এক সময় একটা ভারি বোঝায় পরিণত হয়।
একদিন সে বলেই ফেলে, "আমি আমার মতো করে চলবো। তোমরা বোঝো না!"
মা চোখ মুছে চুপ করে থাকেন, আর বাবা মাথা নিচু করে বেরিয়ে যান ঘর থেকে। সেই দৃশ্যটা আজও রাকিব ভুলতে পারেনি।
৩. সফলতা, কিন্তু শূন্যতা
সময় গড়ায়। রাকিব একটা বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি পায়, পরে নিজের ব্যবসা শুরু করে। অর্থ, গাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট— সবকিছু ধীরে ধীরে পেয়ে যায়।
কিন্তু একদিন রাতে, মায়ের পুরনো একটা চিঠি হাতে আসে। চিঠিতে লেখা ছিল —
"তুই বড় হ, সফল হ। কিন্তু মনে রাখিস, মানুষ বড় হয় হৃদয়ের গভীরতা দিয়ে, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স দিয়ে নয়..."
সেই চিঠি পড়ে রাকিব হঠাৎই থমকে যায়।
৪. ফিরে দেখা ও উপলব্ধি
আজ বারান্দায় বসে সে ভাবে— যদি তখন একটু বুঝতাম!
যদি বাবা-মাকে আরও সময় দিতাম, যদি বন্ধুটার ফোন ধরতাম যেদিন ও অসুস্থ ছিল...
জীবনে সব কিছু পাওয়ার পরও কিছু 'না পাওয়ার' হাহাকার থেকে যায়।
সে আজ বুঝতে পারে, পিছন ফিরে তাকানো মানে শুধু অনুশোচনা নয়। ওটা শেখার জায়গা। ওখানেই আমাদের আসল মানুষটা লুকিয়ে থাকে— যে মানুষটা আমরা একসময় ছিলাম বা হতে চেয়েছিলাম।
৫. নতুন শুরু
রাকিব সিদ্ধান্ত নেয়— এখন থেকে প্রতিদিন পরিবারের সাথে সময় কাটাবে, পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে, নিজের সন্তানকে শুধু টাকা নয়, সময় দেবে।
পিছন ফিরে তাকানোটা ওর কাছে এখন আর কষ্টের নয়, বরং অনুপ্রেরণার।
শেষ কথা:
জীবনে মাঝে মাঝে থেমে, পিছন ফিরে তাকানো দরকার। শুধু ভুল খুঁজে বের করতে নয়, নিজেকে আরও ভালোভাবে চিনতে, বুঝতে— এবং সামনে আরও মানবিক ও অর্থবহ পথ বেছে নিতে।