ট্রাম্পের চাপে মোদি সরকারের পিছু হটল? বিরোধীদের প্রশ্নে উত্তাল ভারতীয় রাজনীতি

দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পেছনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে ফের বিতর্ক দানা বাঁধছে। তাঁর হস্তক্ষেপেই ভারত ও পাকিস্তান দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে হঠাৎ করে যুদ্ধবিরতি হয়েছে বলে দাবি উঠেছে। এমনকি, ট্রাম্প নিজেই বলেছেন—তাঁর অনুরোধ বা চাপে যুদ্ধ থেমেছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে চলেছেন। একদিকে তিনি দাবি করেছেন, ভারত তাকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের প্রস্তাব দিয়েছে; আবার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের প্রধান টিম কুককে বলেছেন, যেন ভারতে আইফোন তৈরি না করা হয়। ট্রাম্পের এমন বক্তব্যে অস্বস্তিতে পড়েছে ভারত সরকার।

বিরোধী দলগুলো এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী চিঠি লিখে সংসদের বিশেষ অধিবেশন দাবি করেছেন, যাতে পুলওয়ামা হামলা, অপারেশন সিঁদুর এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, যুদ্ধ হঠাৎ থেমে যাওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে এবং ট্রাম্পের দাবি ভারত সরকার খণ্ডন করেনি, যা উদ্বেগজনক।

বিরোধী দলের অন্য নেতারাও মোদি সরকারের অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বলেছেন, "আমরা সার্বভৌম দেশ, তৃতীয় কোনো দেশের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া যায় না।" শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, "ট্রাম্প কি মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ থামিয়েছেন? তাহলে আমাদের বিষয়ে কেন তিনি কথা বলবেন?"

বিজেপির তরফে যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে কোনো জবাব আসেনি, তবে বিজেপি সাংসদ কঙ্গনা রানাওয়াত এক সময় সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্পকে প্রশংসা করে পোস্ট করেছিলেন, পরে তা মুছে ফেলতে হয় দলের চাপেই।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের বক্তব্য ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করেছে। অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর মতে, “ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে বড় খেলোয়াড় হিসেবে তুলে ধরছিল, ট্রাম্পের কথাবার্তায় সেই ইমেজে ধাক্কা লেগেছে।” সাংবাদিক শরদ গুপ্তা স্মরণ করিয়ে দেন ১৯৭১ সালের প্রসঙ্গ, যখন মার্কিন চাপ উপেক্ষা করেও ইন্দিরা গান্ধী সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে—ভারতের নীতিগত অবস্থান কি বদলে যাচ্ছে? ট্রাম্পের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাপে ভারত কি আপস করছে? বিরোধীরা এর ব্যাখ্যা চাইছে, আর সরকার এখনও এ বিষয়ে নিরব।