"আমাদের শিশুরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে": গাজার এক পিতার আর্তনাদ
ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় বিপর্যস্ত গাজার বাস্তবতা এখন ভয়াবহ মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পে চার সন্তানের জনক মাহমুদ আল-হাও প্রতিদিন ছুটে যান কোনো খাবারের সন্ধানে। তার একমাত্র আশ্রয়, একটি দাতব্য সংস্থার স্যুপ কিচেন—যেখানে এক কাপ ডালের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত।
মাহমুদ বলেন, “আমার একটি অসুস্থ মেয়ে আছে। তাকে কিছু দিতে পারি না। রুটি নেই, কিছুই নেই। সকাল ৮টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি এক বাটি ডালের জন্য। এটা একজনের জন্য যথেষ্ট না হলেও আমাকে আমার ছয় সদস্যের পরিবারে ভাগ করে দিতে হয়।”
কখনও কিছু খাবার জুটে, আবার কোনো দিন খালি হাতে ফিরতে হয়। এমন দিনে সন্তানদের মুখের দিকে তাকানো তার পক্ষে সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, “আজ ডাল পেয়েছি—এটাই আমাদের সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার। আমি চাই, বিশ্বের মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াক। আমাদের শিশুরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে।”
রয়টার্স জানায়, মার্চের শুরু থেকে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য, চিকিৎসা ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ২৪ লাখ অধিবাসীর জন্য মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কিছু ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের অনুমতি না মেলায় বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে খাদ্য পৌঁছানো যায়নি। ফলে বুধবার পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণও সম্ভব হয়নি।
এই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যেই গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গত আট দিনে ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় চিকিৎসা সূত্র। আল-জাজিরার তথ্যমতে, বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৩ হাজার ৫৭৩ জন ছাড়িয়েছে।