গাজায় ভয়াবহ সময় পার করছে শিশুরা — ক্ষুধা, মৃত্যু আর আশাহীনতার মাঝে বেড়ে ওঠার নামই এখন শৈশব

গাজায় শিশুদের জন্য সময় যেন থমকে গেছে। তারা প্রতিনিয়ত দেখছে মৃত্যু, মৃতপ্রায় মানুষদের আর জীবিতদের চোখে শুধুই ভয়। মৃত্যু এখন আর বিস্ময়ের কিছু নয় — একমাত্র ক্ষুধাই তাদের কাবু করে ফেলছে বারবার।

সামান্য কিছু খাবারের আশায় শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে, জানে হয়তো কিছুই পাবে না। তাদের ক্ষুধা, মৃত্যু, এবং মৃত্যুর পর কাফনে জড়ানো নিথর দেহ—এগুলোই এখন গাজার দৈনন্দিন বাস্তবতা। যদি কারও পরিচয় পাওয়া যায়, তাহলে কাফনের ওপর লেখা হয় তার নাম, কিন্তু অনেক শিশুই থেকে যাচ্ছে অজ্ঞাত।

১৯ মাস ধরে চলা এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা দারুণভাবে বিপর্যস্ত। বিবিসির একজন প্রতিবেদক খুঁজছিলেন মাত্র পাঁচ মাস বয়সী একটি মেয়ে শিশুকে—সিওয়ার আশৌর। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে শিশুটির কান্না তার হৃদয় ভেঙে দিয়েছিল।

পাঁচ মাস বয়সেও সিওয়ারের ওজন মাত্র ২ কেজির একটু বেশি, যেখানে একটি সুস্থ শিশুর ওজন হওয়া উচিত ৬ কেজির বেশি। তাকে এখন পরিবার নিয়ে থাকতে হচ্ছে আল-মাওয়াইসি এলাকার একটি অস্থায়ী শিবিরে, যেখানে প্রচণ্ড ভিড়ে হাঁটা-চলাও দায়।

সিওয়ারের মা নাজওয়া জানালেন, তার মেয়ে দুধ হজম করতে পারে না, এবং যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে প্রয়োজনীয় ফর্মুলা দুধ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। হাসপাতালে কিছুটা স্থিতিশীল হলেও এখন আবার তার ওজন কমছে। মাছি ঘিরে ধরে শিশুটির মুখ, তাই নাজওয়া তার মুখ ঢেকে রাখেন স্কার্ফ দিয়ে।

সিওয়ারের জন্মের পর থেকেই তার চারপাশে বোমা, গোলা, রকেটের শব্দ। নাজওয়া বললেন, “সে শব্দ বোঝে। প্রতিটি বিস্ফোরণেই সে কেঁদে ওঠে, ঘুম থেকে জেগে চমকে ওঠে।”

চিকিৎসকরা বলছেন, অপুষ্টির কারণে অনেক মা বুকের দুধ পান করাতে পারছেন না। এখন সবচেয়ে বড় সংকট হলো খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির।

নাজওয়া নিজেই অপুষ্টিতে ভুগছিলেন, সিওয়ারের জন্মের সময় থেকেই। সীমান্ত বন্ধ আর জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় দুধ কিংবা ডায়াপার কেনাও সম্ভব হচ্ছে না।

ইসরায়েলের সামরিক সংস্থা কোগাট দাবি করছে, গাজায় খাদ্যের কোনো সংকট নেই এবং তারা নিয়মিত শিশু খাদ্য ও ময়দা সরবরাহ করছে। তবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পও গাজার ক্ষুধার্ত জনগণের কথা বলেছেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, “ইসরায়েল যে পরিমাণ সাহায্য প্রবেশ করতে দিচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় এক চা চামচের মতো।”

তিনি আরও জানান, তেল, আশ্রয়, গ্যাস, পানি—সবকিছুর অভাবে ফিলিস্তিনিরা এখন এই সংঘাতের নিষ্ঠুরতা অনুভব করছে চূড়ান্ত মাত্রায়। জাতিসংঘের মতে, গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা এখন হয় ইসরায়েলি সামরিক জোন বা এমন জায়গা যেখান থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলা হয়েছে।