"আট মাসের মেয়েকে কোলে নিয়ে রাতের আঁধারে ঘর ছাড়েন, ফিরলেন আলোঝলমলে পর্দায়—রুখসার রহমানের সাহসী গল্প"

বলিউডে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেও অসাধারণ উপস্থিতি দিয়ে দর্শকদের মনে দাগ কেটেছেন রুখসার রহমান। ‘পিকে’, ‘সরকার’, ‘উরি’ কিংবা ‘গড তুস্সি গ্রেট হো’—সিনেমার পর্দায় তার মুখ যেন এক আস্থার নাম। তবে পর্দার বাইরের জীবনটা ছিল ঠিক ততটাই রুক্ষ, কণ্টকাকীর্ণ ও সাহসিকতায় ভরপুর।

সম্প্রতি ‘হিউম্যানস অফ বম্বে’-কে দেওয়া এক অন্তরঙ্গ সাক্ষাৎকারে রুখসার নিজের জীবনের অজানা অধ্যায় প্রকাশ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে দীপক আনন্দ পরিচালিত ‘ইয়াদ রাখেগি দুনিয়া’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন তিনি। এরপর ঋষি কাপুরের বিপরীতে ‘ইন্তেহা প্যায়ার কি’ ছবিতেও অভিনয় করেন।

তবে ক্যামেরার ঝলকানার পেছনে ছিল পরিবার থেকে আসা প্রবল বাধা।
“আমার মা-বাবা অভিনয় মেনে নিতে পারেননি,” বলেন রুখসার। “শেষমেশ আমাকে জোর করেই বিয়ে দেওয়া হয়।”

মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তিনি এক কন্যাসন্তানের মা হন—নাম আয়েশা।
তবে যতই মা হওয়ার আনন্দে জীবন নতুন অর্থ পাক, তার দাম্পত্যজীবনে ধীরে ধীরে ফাটল ধরে। সেই সময় একরাতেই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেন তিনি। মাত্র ৮ মাস বয়সী আয়েশাকে কোলে নিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে চুপিচুপি বেরিয়ে আসেন।

“বাচ্চাটা ঘুমিয়ে ছিল,” স্মৃতি রোমন্থন করেন রুখসার। “জানি না কতদূর যাব, কিন্তু জানতাম—এটাই সঠিক। বাবার দরজায় গিয়ে দাঁড়াতেই তিনি কিছু না বলে বলেছিলেন, ‘তোমার সব ঠিক হয়ে যাবে।’”

এরপর জীবিকা নির্বাহের জন্য উত্তরপ্রদেশের রামপুরে ছোট একটি পোশাকের দোকান খুলে বসেন। কিন্তু ক্যামেরার প্রতি ভালোবাসা তো আর এত সহজে মরে না। ধীরে ধীরে আবার অভিনয়ে ফিরতে শুরু করেন—প্রথমে ছোট চরিত্রে, পরে বড় প্রজেক্টে।

রুখসার পরবর্তীতে পরিচালক ফারুক কবিরকে বিয়ে করেন, তবে ১৩ বছর পর সেই সম্পর্কেও বিচ্ছেদ ঘটে।
“বিচ্ছেদ খুব কষ্টদায়ক ছিল,” বলেন তিনি, “তবে আয়েশা ছিল পাশে। ও-ই যেন আমাকে আবার বড় করে তুলেছে।”

এই দীর্ঘ পথচলায় রুখসার বুঝেছেন, "আপনি যদি কোনো কিছু ভালোবাসেন, তবে সেটা একদিন না একদিন আপনাকেই খুঁজে নেয়।"

রুখসার রহমানের জীবন শুধু একজন অভিনেত্রীর ক্যারিয়ারের নয়—এটি একজন নারীর, এক মায়ের এবং একজন সংগ্রামী মানুষের গল্প। সাহস, সম্মান, আত্মনিবেদন ও ফেরার দৃঢ়তার এক অনবদ্য উদাহরণ।