"বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধার্ত অঞ্চল এখন গাজা: জাতিসংঘ"
ইসরায়েলের টানা হামলা ও অবরোধের ফলে গাজা উপত্যকা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কয়েক মাস ধরে চলা খাদ্য সংকটে সেখানে লাখো মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধাপীড়িত ও খাদ্য সংকটপূর্ণ এলাকা।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিস (OCHA) জানিয়েছে, গাজার প্রায় ২৩ লাখ মানুষই এখন ‘বিপর্যয়কর ক্ষুধার’ মুখোমুখি। শিশুদের মধ্যে অনাহার ও চরম অপুষ্টি ছড়িয়ে পড়েছে। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এক ব্যাগ আটার জন্য মানুষ মরিয়া হয়ে উঠেছে, যা সেখানে খাদ্য-সংকটের প্রকটতা তুলে ধরে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র জেন্স লারকে বলেন, "গাজা এখন বিশ্বের একমাত্র সংজ্ঞায়িত অঞ্চল, যেখানে পুরো জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।"
🔻 ত্রাণ প্রবেশে বাধা
গাজার জনগণের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোও এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মাত্র পাঁচটি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পেরেছে, যা ছিল চার দিনের মধ্যে প্রথম প্রবেশ। শুক্রবার জাতিসংঘ জানিয়েছে, ওই ট্রাকগুলো চিকিৎসা সরঞ্জান বহন করছিল দেইর আল-বালাহের একটি ফিল্ড হাসপাতালের জন্য। কিন্তু বেশিরভাগ সরবরাহ লুট হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে আরও ৬০টি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি পেলেও সংঘর্ষের কারণে সেগুলোর প্রবেশ সম্ভব হয়নি।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় ৮০ দিনের বেশি সময় ধরে খাবার, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির প্রবেশ সীমিত রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৯০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক সীমান্তে আটকা রয়েছে। এসবের মধ্যে মাত্র অল্প কয়েকটি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারছে।
🔻 জনগণের হাহাকার
ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা বলছেন, খাবার পাওয়াই এখন কঠিন। ত্রাণ বিতরণের নির্দিষ্ট ব্যবস্থা না থাকায়, মানুষেরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে ছোটে এক ব্যাগ আটা বা এক প্যাকেট খাবারের জন্য। কেউ কেউ বলছেন, "এখন বেঁচে থাকার জন্য যা করতে হয়, তাই করছি।"
🔻 জরুরি সহায়তার আহ্বান
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানিয়েছেন, গাজায় ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিত করতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
গার্ডিয়ান ও আলজাজিরার তথ্য অনুসারে, গাজায় ইতোমধ্যেই অনাহারে অন্তত ২৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
🔻 একটি নীরব দুর্ভিক্ষ
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, গাজা এখন এমন এক নীরব দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে, যেখানে প্রতিটি মানুষ ক্ষুধার সঙ্গে যুদ্ধ করছে। যদি অবিলম্বে খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত না করা হয়, তাহলে তা হতে পারে ইতিহাসের এক ভয়াবহতম মানবিক বিপর্যয়।