২০২৪ সালের নির্বাচনে ‘বড় গেম’–এর অংশ হিসেবে দেশে আনা হয়েছিল সুব্রত বাইনকে
২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ‘বড় গেম’ খেলতে ২০২২ সালের এপ্রিলে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে। তাকে কঠোর গোপনীয়তায় রাখা হয় ‘আয়নাঘরে’। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে তাকে ব্যবহার করে এক ধরনের নাটক মঞ্চায়নের ছক ছিল বলে গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হয়নি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে জিজ্ঞাসাবাদে সুব্রত এসব তথ্য জানান।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচনের সময় সুব্রত বাইনকে দিয়ে একটি অডিও ও ভিডিও বার্তা তৈরি করা হতো। সেখানে তাকে বলতে হতো—তিনি দেশে ফিরেছেন, বিএনপি তাকে এনেছে এবং আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করতে হবে। পরে সেটি প্রচার করে দায় বিএনপির ওপর চাপানো হতো।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আয়নাঘর থেকে মুক্তি পান সুব্রত বাইন। মুক্তির পর তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। এরপরও কেন তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হলো—সে বিষয়ে তিনি নিজেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
সন্ত্রাসী জীবনের শুরু ও কারাগার পালানোর গল্প
জিজ্ঞাসাবাদে সুব্রত বাইন জানান, মাত্র ১৮ বছর বয়সে একটি ব্যক্তিগত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়েন। একজনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনায় ১৯৮৩ সালে প্রথমবার জেলে যান। জেলে থেকেই অপরাধী জগতে তার সম্পৃক্ততা গভীর হয়।
পরে ২০০৮ সালে তিনি ভারত থেকে পালিয়ে নেপালে আশ্রয় নেন এবং সেখানে গ্রেফতার হন। কারাগারে ‘চৌকিদার’ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিহারি বন্দিদের সহায়তায় এবং জেল কর্তৃপক্ষের আস্থার সুযোগে ৭০ ফুট দীর্ঘ একটি ত্রিকোণাকৃতির সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পালিয়ে যান। এরপর আবার ভারতে ফেরত যান। কিছুদিন পর তার স্ত্রী তাকে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেন।
ছদ্মনামে পাসপোর্ট, রহস্যময় যাতায়াত
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সুব্রত বাইন মোহাম্মদ আলী নামে ছদ্মনাম ব্যবহার করে একটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছিলেন। সেই পাসপোর্ট ব্যবহার করে ২০০১ সালের ৮ অক্টোবর তিনি বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। এরপর বহুবার সীমান্ত পারাপার করেছেন বলে তথ্য রয়েছে।
ভারতে তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা ছিল, এর মধ্যে একটিতে তিনি খালাস পান। বাকি তিনটি চলমান থাকা অবস্থায় ২০২২ সালে ভারত সরকার তাকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করে।
ফের গ্রেপ্তার, তদন্ত চলছে
সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে আরও কিছু স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর তথ্য তদন্তাধীন রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সম্পর্কে ছড়িয়ে পড়া তথ্যগুলোও গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করছে গোয়েন্দা সংস্থা। বিশেষ করে, ছদ্মনামে পাসপোর্ট সংগ্রহ এবং দেশান্তর সংক্রান্ত তথ্য তদন্তের আওতায় রয়েছে।