মিরপুরে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর ২১ লাখ টাকা লুট: গুলি, ছুরিকাঘাত ও মাইক্রোবাসের সূত্র ধরে ছয়জন গ্রেপ্তার
রাজধানীর মিরপুরে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে ও ছুরিকাঘাত করে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা ও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস শনাক্তের মাধ্যমে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—মো. জাফর (৩৩), মোস্তাফিজুর রহমান (৪০), সৈকত হোসেন ওরফে দিপু মৃধা (৫২), সোহাগ হাসান (৩৪), জলিল মোল্লা (৫২) ও পলাশ আহমেদ (২৬)। ডিবি জানিয়েছে, তারা সবাই পেশাদার ডাকাত। মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ২৭ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জের মালিক রাসেল ও তার ভগ্নিপতি জাহিদুল হক চৌধুরী মিরপুর-১১ নম্বর সি-ব্লকের বাসা থেকে ২১ লাখ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে মিরপুর-১০ নম্বরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা হন। শেরেবাংলা স্টেডিয়াম ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝের গলিতে পৌঁছালে চারটি মোটরসাইকেলে আসা ৭-৮ জন মুখোশধারী দুর্বৃত্ত তাদের ঘিরে ফেলে। একজন জাহিদুলের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। প্রতিরোধের চেষ্টায় রাসেল ও জাহিদুলকে মারধর করা হয়। এক দুর্বৃত্ত ফাঁকা গুলি ছোড়ে, আরেকজন ধারালো চাপাতি দিয়ে জাহিদুলকে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। ছিনতাইকারীরা মোটরসাইকেলে দ্রুত পালিয়ে যায়। ঘটনাটি এক পথচারীর মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ হয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার পর মিরপুর মডেল থানায় মামলা হয়। তদন্তে নেমে ডিবির একাধিক দল প্রযুক্তির সহায়তায় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস শনাক্ত করে। পরে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চালক জাফরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়।
পরবর্তীতে ঢাকাসহ বরিশাল, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ ও যশোরে একযোগে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইয়ে জড়িত বাকি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত ৫ লাখ ৩ হাজার টাকা, ১০৬টি বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, ২ লাখ ১২ হাজার টাকার জাল নোট, তিনটি মোটরসাইকেল, ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত হাইয়েস মাইক্রোবাস, একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি চাপাতি ও তিনটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, খুন ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মামলার তদন্ত চলছে এবং অন্যান্য জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বাকি লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।