কুরবানির পশুর গোশত বিক্রি করা যাবে?

ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, কুরবানির পশুর গোশত বিক্রি করা কুরবানিদাতার জন্য মাকরুহ তাহরিমি—অত্যন্ত অপছন্দনীয় ও গুনাহের কাছাকাছি কাজ। কেউ যদি তা বিক্রি করেন, তবে বিক্রির অর্থ সদকা করা ওয়াজিব (ফাতাওয়ায়ে শামি: ৫/৪৭৭)।

গোশত বণ্টনের সুন্নতি পদ্ধতি হলো তিন ভাগ করা:

  1. এক ভাগ নিজে ও পরিবার-পরিজনের জন্য রাখা,

  2. এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের মাঝে হাদিয়া হিসেবে বিতরণ করা,

  3. এক ভাগ গরিব ও মিসকিনদের মাঝে সদকা করা (ফাতাওয়ায়ে শামি: ১/৪৭৩)।

যদি কয়েকজন মিলে একসঙ্গে পশু কুরবানি করেন, তবে গোশত মেপে সমানভাবে বণ্টন করা ফরজ। অনুমানভিত্তিক ভাগ দেওয়া বৈধ নয়, কারণ এতে সুদের শঙ্কা থাকে। তবে যদি চামড়া, মাথা, পায়া ইত্যাদিও বণ্টনের অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন কিছুটা অসাম্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে, নির্দিষ্ট শর্তে (ফাতাওয়ায়ে শামি: ২/২৩২)।

অমুসলিমকে কুরবানির গোশত দেওয়া বৈধ হলেও, মজুরি বাবদ তা দেওয়া বৈধ নয়। যেমন, কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে গোশত, চামড়া বা রশি দেওয়া যাবে না। পারিশ্রমিক আলাদাভাবে নগদ বা অন্য কোনোভাবে পরিশোধ করতে হবে (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি: ৫/৩০)।

গোশতের সংরক্ষণ: কুরবানির গোশত তিন দিনের বেশি সময় জমিয়ে রাখাও বৈধ। এটি আগের যুগে নিষিদ্ধ থাকলেও বর্তমানে বৈধতা আছে। কুরবানির পশুর রশি সদকা করাও মুস্তাহাব।

চামড়া বিক্রি: পশুর চামড়া যথাযথ মূল্য না পেলে কসাইয়ের কাছে বিক্রি করা জায়েজ নয়, বিশেষ করে যদি তা গোশত কাটার সাথে যুক্ত হয় (ফাতাওয়ায়ে শামি: ৪/২৩৪)।

সম্মিলিত কুরবানির ক্ষেত্রে: যদি একাধিক ব্যক্তি একটি পশু কুরবানি করেন এবং সব গোশত একত্রে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করেন বা রান্না করে খাওয়ান, তবে তা বৈধ—শর্ত হলো, অংশীদারদের সবার সম্মতি থাকতে হবে। একজনও যদি আপত্তি করেন, তাহলে এটি বৈধ হবে না (মাসায়িলে ঈদাইন, পৃষ্ঠা ১৮৩)।