ইরান-ইসরাইল সংঘাত: আদানির ‘পাহাড়সম’ বিনিয়োগ চাপে

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানির জন্য বড় রকমের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইলে আদানি গ্রুপের বিপুল বিনিয়োগ এখন গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

বিশেষ করে, ইসরাইলের হাইফা বন্দর এবং প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে আদানির সম্পৃক্ততা এই সংঘাতের সরাসরি অভিঘাতের আওতায় এসেছে। ইরানের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় এই উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

হাইফা বন্দরে হামলা, আদানির দুশ্চিন্তা

গত শনিবার ইরান হাইফা শহরে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল-১৩ জানিয়েছে, উপকূলবর্তী হাইফা এবং তামরা শহরে কয়েকটি মিসাইল সরাসরি আঘাত হানে।

এই হাইফা বন্দরই ২০২৩ সালে ১.১৮ বিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নিয়েছিল আদানি পোর্টস। এটি ইসরাইলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বন্দর এলাকায় হামলা ও ভবিষ্যতের সংঘাতের আশঙ্কা বন্দর পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এতে আদানির রাজস্ব ক্ষতি, অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি এবং সামগ্রিক বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ড্রোন থেকে সেমিকন্ডাক্টর: আরও খাতে চাপ

২০১৮ সালে আদানি এন্টারপ্রাইজ ও ইসরাইলি প্রতিরক্ষা সংস্থা এলবিট সিস্টেমস যৌথভাবে হায়দরাবাদে একটি ড্রোন কারখানা স্থাপন করে। এই কারখানায় তৈরি হার্মিস ৯০০ ড্রোন এখন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অস্ত্রভাণ্ডারের অংশ।

যদিও যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ড্রোনের চাহিদা বাড়তে পারে, তবে এতে আদানি গ্রুপকে নতুন রাজনৈতিক ও নৈতিক বিতর্কের মুখে পড়তে হতে পারে—বিশেষ করে ভারতের নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির প্রেক্ষাপটে।

তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, আদানি গ্রুপ ও ইসরাইলের টাওয়ার সেমিকন্ডাক্টরের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারের একটি যৌথ প্রকল্প সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর পেছনে বাজারের অনিশ্চয়তা ও ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বড় ভূমিকা রেখেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে আদানির স্বার্থ ঝুঁকিতে

আদানির জ্বালানি, লজিস্টিকস ও অবকাঠামো খাতেও মধ্যপ্রাচ্যে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। চলমান সংঘাতের কারণে তেলের দাম বৃদ্ধি, শিপিং ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য সংকট আদানির বৈশ্বিক ব্যবসার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

এখন পর্যন্ত আদানি গ্রুপ এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি আদানির শেয়ারমূল্য এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা—উভয়ের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে।

এক সংকট কাটতেই আরেকটি

উল্লেখ্য, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদানি গ্রুপের শেয়ারমূল্যে ব্যাপক ধস নামে এবং প্রতিষ্ঠানটি বড় রকমের আর্থিক ও ভাবমূর্তিগত চ্যালেঞ্জে পড়ে। সেই সংকট কাটিয়ে উঠতেই ইরান-ইসরাইল সংঘাত আদানিকে নতুন করে এক অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে।

ভবিষ্যৎ কী বলছে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি এখন আর চমক নয়, বরং বাস্তবতা। আদানি গ্রুপের মতো বহুজাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি তাদের পোর্টফোলিও এবং ব্যবসায়িক কৌশলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

সময়ই বলবে, আদানি গ্রুপ কীভাবে এই ‘ভূ-রাজনৈতিক ঝড়’ সামাল দিতে সক্ষম হয়।