মধ্য ইসরায়েলের রেহোভোতে অবস্থিত ওয়েইজম্যান বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট বহু বছর ধরে ইসরায়েলের সামরিক গবেষণার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সোমবার রাতে ইরানের এক নিখুঁত ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এই প্রতিষ্ঠানটি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরান দাবি করেছে, এই হামলা ছিল তাদের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চালানো ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাব।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য মার্কার জানিয়েছে, একাধিক ভবনে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, যার ফলে একটি প্রধান গবেষণা কমপ্লেক্স সম্পূর্ণভাবে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
ওই ইনস্টিটিউটে চলত জীববিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অণুজীববিজ্ঞানের গবেষণা—যার ফলাফল সরাসরি ব্যবহার হতো নজরদারি প্রযুক্তি, অস্ত্র ব্যবস্থাপনা ও যুদ্ধক্ষেত্রের কৌশলে। এই প্রযুক্তিই গাজা, লেবানন, ইয়েমেন এবং ইরানের ভূখণ্ডে সাম্প্রতিক হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে।
ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউটকে অনেকেই বলেন ‘ইসরায়েলের বৈজ্ঞানিক ও সামরিক মস্তিষ্ক’। এখান থেকেই পরিচালিত হয়েছে ড্রোন নিয়ন্ত্রণ, এয়ারস্ট্রাইক কন্ট্রোল এবং ফিল্ড মেডিকেল টেকনোলজির উন্নয়ন—যেগুলো বহুবার বেসামরিক এলাকায় ব্যবহৃত হয়েছে।
ধ্বংস হওয়া ল্যাবগুলোর একটি পরিচালনা করতেন আণবিক কোষ জীববিদ্যার প্রখ্যাত গবেষক অধ্যাপক এলদাদ জাহোর। অন্যদিকে অধ্যাপক এরান সেগালের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাগারেও ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানে। তার মতে, লক্ষাধিক ডলারের যন্ত্রপাতি এবং গবেষণার কাঠামো একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরায়েলি মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে—ধসে পড়া ভবন, আগুনে ঝলসে যাওয়া ল্যাব, গলে যাওয়া বৈদ্যুতিক লাইন। দ্য মার্কার বলছে, এ ছিল পরিকল্পিত ও নির্ভুল হামলা, এলোমেলো নয়।
বিশ্লেষকদের ধারণা, এটি হতে পারে ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলি পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যার প্রতিশোধ।
ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শ্যারেল ফ্লেইশম্যান বলেছেন, “আমাদের লাইফ সায়েন্স গবেষণাগারগুলোতে এমন উপাদান ছিল যা পুনরায় সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব। এগুলো ধ্বংস হওয়া অপূরণীয় ক্ষতি।”
অন্য এক অধ্যাপক ওরেন শুল্ডিনার বলেন, “মনে হচ্ছে ল্যাবটাই যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে।” তিনি ধারণা দিয়েছেন, এই ল্যাব পুনর্গঠনে অন্তত দুই বছর সময় লাগবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান এই হামলার মাধ্যমে একটি কঠোর বার্তা দিয়েছে—যেখানে সামরিক গবেষণা ‘বেসামরিক ছদ্মবেশে’ চালানো হয়, সেসব আর নিরাপদ নয়। এমন ‘দ্বৈত পরিচয়’ আর মেনে নেওয়া হবে না।
সূত্র: আল মায়াদিন, দ্য মার্কার