ভারত থেকে বন্দুকের মুখে মুসলিমদের বাংলাদেশে পাঠানোর অভিযোগ, ফেরত পাঠাচ্ছে বিজিবি

ভারত সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের অবৈধভাবে বন্দুকের মুখে বাংলাদেশে পুশ-ইন করছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বরাতে জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহে ভারতজুড়ে হাজার হাজার মানুষকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। তাদের অধিকাংশই মুসলিম ও ‘সন্দেহভাজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’। তবে অভিযোগ রয়েছে, এই অভিযানে অনেক প্রকৃত ভারতীয় নাগরিককেও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) জানায়, ভারতীয় নাগরিক হিসেবে শনাক্ত প্রায় ২০০ জনকে পুনরায় ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এসব মানুষ বিপজ্জনক ও দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

"জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন"

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন 'অধিকার'-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক তাসকিন ফাহমিনা বলেন, "আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে ভারত মুসলিম ও নিম্নআয়ের মানুষদের বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।"

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যাচাই-বাছাই ছাড়াই এই ধরনের পুশ-ইন বন্ধ করতে ভারত সরকারকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও এখনো কোনো সাড়া মেলেনি।

“তারা আমাদের পশুর মতো আচরণ করেছে”

৬২ বছর বয়সী হাজেরা খাতুনের ঘটনা এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রকট উদাহরণ। ২৫ মে তাকে আসামের বাড়ি থেকে তুলে নেয় পুলিশ। পরদিন মাঝরাতে তাকে ও আরও ১৪ জন মুসলিমকে একটি ভ্যানে করে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যায় বিএসএফ। হাজেরা বলেন, “আমরা বলি আমরা ভারতীয়, কেন বাংলাদেশে যাব? তারা বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দিল—না গেলে গুলি করবে।”

হাজেরা বলেন, ভারতের দিক থেকে গুলির শব্দ শোনার পর সবাই ভয়ে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। পরে বিজিবি তাদের আটক করে, নাগরিকত্বের প্রমাণ পাওয়ার পর তাদের ফেরত পাঠায়।

৩১ মে হাজেরা খাতুন নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। তার পরিবার জানায়, তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন, শরীরজুড়ে ছিল আঘাতের চিহ্ন।

পুশ-ইনের শিকার, এখনো আটকে মালেকা বেগম

বাংলাদেশে আটকে পড়া আরেকজন হলেন ৬৭ বছর বয়সী মালেকা বেগম। ২৫ মে তাকে আসাম থেকে তুলে নেয় পুলিশ। ২৭ মে রাতে ২০ জন মুসলিম পুরুষের সঙ্গে তাকেও বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি জানান, তিনি অসুস্থ এবং একা চলাচল করতে পারেন না।

তার ছেলে ইমরান আলী বলেন, “আমার মায়ের ভারতীয় নাগরিকত্বের যথাযথ কাগজ রয়েছে। এমনকি তার সাত ভাইবোনেরও। তাঁকে বাংলাদেশে পাঠানো সম্পূর্ণ বেআইনি।”

বিজেপির ‘বহিরাগত’ বিরোধী অভিযানের অংশ?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিজেপি সরকার হিন্দু জাতীয়তাবাদী নীতির অংশ হিসেবে মুসলিমদের নিপীড়ন করে আসছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) ও NRC-এর মাধ্যমে ভারতের প্রায় ২০০ মিলিয়ন মুসলিমকে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আসামে অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়নের নামে বহু মুসলিমকে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে ডেকে প্রমাণ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে যে তারা ভারতেরই নাগরিক। অথচ হিন্দু, শিখ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের এ প্রক্রিয়া থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের বিতর্কিত নাগরিক তালিকা তৈরি হওয়ার পর বহু মানুষ আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

সরকার চুপ, নিখোঁজের আশঙ্কা

মানবাধিকারকর্মীরা জানিয়েছেন, আসামে সম্প্রতি আটক হওয়া প্রায় ১০০ জন মুসলিম এখনো নিখোঁজ। আর এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও আসাম পুলিশ বা বিএসএফ কোনো মন্তব্য করেনি।