নিহত আঞ্জুমান মায়া আজিজ শেখের ছেলে আসিফ শেখের (১৮) স্ত্রী। আসিফ কয়া মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খাদ্য পরিবেশক হিসেবে কাজ করেন।
হত্যা নাকি দুর্ঘটনা? দুই পরিবারের ভিন্ন দাবি
শ্বশুরবাড়ির দাবি, আঞ্জুমানের মানসিক সমস্যা ছিল, যা তাকে মাঝেমধ্যেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করত। তবে আঞ্জুমানের বাবার বাড়ির অভিযোগ ভিন্ন। তারা দাবি করছেন, ব্যবসার জন্য টাকা না পেয়ে স্বামী আসিফ তাকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেছে।
নৌ পুলিশের উপপরিদর্শক মো. মনির উদ্দিন জানান, মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
প্রেম, বিয়ে ও রহস্যময় মৃত্যু
স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়া ইউনিয়নের রাধানগর এলাকায় আঞ্জুমানের নানা বাড়ি। সাত মাস আগে সেখানে বেড়াতে গিয়ে আসিফের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই মাস পর বাড়ি থেকে পালিয়ে তারা বিয়ে করেন এবং পরবর্তীতে দুই পরিবার সামাজিকভাবে তাদের বিয়ের স্বীকৃতি দেয়।
শুক্রবার ছিল আসিফের জন্মদিন। সন্ধ্যায় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কেক কিনতে যান। রাতে ঘরোয়াভাবে কেক কাটা হয়, স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর রাত ১০টার দিকে আসিফ ঘুমিয়ে পড়লেও আঞ্জুমান মোবাইল ফোন চালাচ্ছিলেন। রাত ১টার দিকে ঘুম থেকে উঠে আসিফ দেখেন, স্ত্রী ঘরে নেই, দরজাও খোলা। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে পাওয়া যায়নি।
পরিবারের প্রতিক্রিয়া
মরদেহ উদ্ধারের পর আসিফের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড়। শাশুড়ি ফেরদৌসী খাতুন বলেন, "সংসারে কোনো অশান্তি ছিল না। রাতে সবাই একসঙ্গে কেক কাটলাম, খাওয়া-দাওয়া করলাম। কিন্তু রাত ১টার দিকে দেখি, বউ ঘরে নেই। সকালে নদীতে তার লাশ পাওয়া গেল।"
অন্যদিকে, আঞ্জুমানের মা পারভীন খাতুন বলেন, "আসিফ ছলচাতুরি করে আমার মেয়েকে বিয়ে করেছে। তিন দিন আগে ব্যবসার জন্য তিন লাখ টাকা চেয়েছিল। টাকা না পেয়ে মেয়েকে হত্যা করেছে। আমার মেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল না। আমি এর বিচার চাই।"
তদন্তের অগ্রগতি
কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, "ময়নাতদন্তের পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ।"
এ বিষয়ে কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, "মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নৌ পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে।"
0 Comments