রমজান মাস ইসলামের অন্যতম পবিত্র ও বরকতময় মাস। এটি হিজরি ক্যালেন্ডারের নবম মাস, যেখানে মুসলমানরা রোজা পালন করে, ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। এই মাসের ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব:
১. কুরআন নাজিলের মাস
রমজান মাসের সবচেয়ে বড় ফজিলত হলো—এই মাসেই আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদ নাজিল করেছেন। আল্লাহ বলেন:
"রমজান মাস, এতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্য পথের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও বিধান।"(সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)
২. রোজার বিশেষ পুরস্কার
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“মানুষের প্রতিটি নেক কাজের সওয়াব দশগুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আল্লাহ বলেন, ‘রোজা আমার জন্য, এবং আমি নিজ হাতে এর প্রতিদান দেব।’"
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৯৪)
৩. জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়
রাসুল (সা.) বলেছেন:
“যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৯৯)
৪. একটি রোজা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়
রাসুল (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন রোজা রাখে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডলকে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে রাখবেন।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৫৩)
৫. লাইলাতুল কদরের ফজিলত
রমজান মাসের সর্বশ্রেষ্ঠ রাত হলো লাইলাতুল কদর, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই আমি এটি কদর রাতে নাজিল করেছি। কদর রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।”(সূরা আল-কদর: ১-৩)
৬. গুনাহ মোচনের সুযোগ
রাসুল (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০১৪)
৭. দোয়া কবুল হওয়ার সময়
রমজান মাসে রোজাদারের দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন:
“তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না— রোজাদারের দোয়া, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া, এবং মজলুমের (অত্যাচারিত ব্যক্তির) দোয়া।”
(তিরমিজি, হাদিস: ২৫২৬)
৮. উমরাহ করার বিশেষ ফজিলত
রাসুল (সা.) বলেছেন:
“রমজানে যে ব্যক্তি উমরাহ করবে, সে যেন আমার সঙ্গে হজ করল।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৭৮২)
রমজানের করণীয় আমলসমূহ
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।
- বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা।
- দোয়া ও ইস্তেগফার করা।
- দান-সদকা করা।
- রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করা।
- তাহাজ্জুদ ও নফল নামাজ পড়া।
উপসংহার
রমজান শুধু আত্মসংযমের মাস নয়, বরং এটি আত্মশুদ্ধির একটি সুবর্ণ সুযোগ। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান। তাই আমাদের উচিত এই সময়টিকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন!
0 Comments