রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"রমজানের প্রথম দশ দিন রহমত (আল্লাহর অনুগ্রহ), দ্বিতীয় দশ দিন মাগফিরাত (পাপমুক্তি), এবং শেষ দশ দিন নাজাত (জাহান্নাম থেকে মুক্তি)।"
রমজানের তিনটি ভাগের তাৎপর্য
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য অশেষ কল্যাণ ও বরকতের মাস। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান, তবে হাদিস অনুযায়ী এটি তিনটি ভাগে বিভক্ত:
১. প্রথম ১০ দিন – রহমতের দশক
রমজানের প্রথম দশ দিনকে "রহমতের দিন" বলা হয়। এই সময় আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন।
🔹 এই দশকে বিশেষভাবে আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া লাভের জন্য বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত।
🔹 কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও দান-সদকা করার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়।
🔹 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"আল্লাহর রহমত ১০০ ভাগ। এর মাত্র ১ ভাগ দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে, আর বাকি ৯৯ ভাগ তিনি নিজের কাছে রেখেছেন কেয়ামতের দিনের জন্য।" (সহিহ বুখারি: ৬০০০)
📌 দোয়া:
"রাব্বিগ্ ফির্ ওয়ার্হাম্ ওয়া আ-ন্তা খাইরুর রাহিমিন" (হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে ক্ষমা কর এবং দয়া কর, তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু)।
২. দ্বিতীয় ১০ দিন – মাগফিরাতের দশক
রমজানের দ্বিতীয় দশ দিনকে "মাগফিরাতের দিন" বলা হয়। এই সময়ে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের গুনাহ ক্ষমা করেন।
🔹 এই সময়ে বেশি বেশি ইস্তিগফার (গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা) করা উচিত।
🔹 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে তওবা করে, আল্লাহ তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন।" (তিরমিজি: ৩৫৩৭)
🔹 আমাদের উচিত, আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা চাওয়া এবং কৃত গুনাহের জন্য অনুশোচনা করা।
📌 দোয়া:
"আস্তাগফিরুল্লাহা রব্বি মিন কুল্লি জাম্বিন ওয়াতুবু ইলাইহি" (আমি আল্লাহর কাছে আমার সব গুনাহের জন্য ক্ষমা চাই এবং তাঁর কাছে তওবা করছি)।
৩. শেষ ১০ দিন – নাজাতের দশক
রমজানের শেষ দশ দিনকে "নাজাতের (মুক্তির) দিন" বলা হয়। এই সময় আল্লাহ তাআলা অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।
🔹 এই দশকের মধ্যে লাইলাতুল কদর রয়েছে, যা ১,০০০ মাসের চেয়ে উত্তম (৯৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের সমান)।
🔹 রাসুল (সা.) এই সময়ে ইতেকাফ করতেন এবং সর্বোচ্চ ইবাদতে মগ্ন থাকতেন।
🔹 এই সময় বেশি করে দোয়া, তাহাজ্জুদ, ইস্তিগফার, দরুদ শরিফ ও দান-সদকা করা উচিত।
📌 দোয়া:
"আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার" (হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন)।
উপসংহার
রমজানের প্রতিটি দিনই বরকতময়। তবে এই তিনটি ভাগ আমাদের ইবাদতের গতি বাড়ানোর জন্য একটি নির্দেশনা দেয়।
✅ প্রথম ১০ দিনে আল্লাহর রহমত কামনা করা উচিত।
✅ দ্বিতীয় ১০ দিনে গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি ইস্তিগফার করা উচিত।
✅ শেষ ১০ দিনে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিরলসভাবে ইবাদত করা উচিত।
আসুন, আমরা সবাই রমজান মাসের এই তিনটি ভাগের গুরুত্ব অনুধাবন করে যথাযথভাবে ইবাদত করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি। 🤲
0 Comments