ভোটসন্ত্রাস ব্যক্তি বা দলের জন্য কখনোই কল্যাণকর নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।  তিনি বলেন, ভোটসন্ত্রাসের মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে জয়লাভ করা সম্ভব হলেও, দীর্ঘমেয়াদে তা ব্যক্তি বা দলের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনে না।  তিনি সতর্ক করে বলেন, "আমি সবাইকে অনুরোধ করব, কেউ যেন এ ধরনের কাজ না করেন।"

 রোববার জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নতুন প্রত্যাশা

 সিইসি জানান, ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী ২ মার্চ চূড়ান্ত করা হয়।  তবে এ বছর বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা হালনাগাদ করার কাজও চলছে, যা আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে।

 তিনি বলেন, "মানুষ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে।  যদি এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত না হয়, তবে যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।  এখন ভোটাধিকার শুধু একটি অধিকার নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও।  আমাদের ওপর জনগণের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে, যা অতীতের কোনো নির্বাচন কমিশনের ওপর ছিল না।"

 গণতন্ত্র ও দেশপ্রেম নিয়ে মন্তব্য

 রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সিইসি বলেন, "গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো ভিন্নমত থাকা।  তবে আমাদের দেশে অনেকেই মনে করেন, শুধুমাত্র তার দলই দেশপ্রেমিক।  এটি সঠিক নয়।  প্রকৃতপক্ষে, মানুষ জন্মগতভাবেই দেশপ্রেমিক।  তবে পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে দেশপ্রেমের প্রকাশ কম-বেশি হতে পারে।"

 তিনি আরও বলেন, "আমি যত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, এমন কাউকে পাইনি, যে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় না।  সব রাজনৈতিক দলই চায় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হোক।  আমাদের একমাত্র এজেন্ডা হলো সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা।  এর বাইরে আমাদের কোনো লক্ষ্য নেই।"

 নির্বাচন কমিশনারদের মতামত

 অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমান বলেন, জনগণের অংশগ্রহণই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মূল ভিত্তি।  জনগণ যখন তাদের শাসক নির্বাচন করে, তখনই প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিফলিত হয়।

 নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেন, "দেশে চারদিকে সংস্কারের কথা শোনা যাচ্ছে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের সংস্কার হবে না কেন?  আমরা চাই, ভোটগ্রহণ যেন উন্মুক্ত পরিবেশে হয়।  স্কুল-কলেজের মাঠে নির্বাচন আয়োজন কি সম্ভব নয়?  স্বচ্ছতার জন্য এ ধরনের পরিবর্তন দরকার, তবে এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।"

 নির্বাচন কমিশনার মো.  আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, "যদি বিগত নির্বাচনগুলোতে অনিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে তার দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে।  নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং এর দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে।"  তিনি আরও বলেন, "আমরা কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছি।  ভেঙে যেতে পারি, কিন্তু নীতিগতভাবে পিছপা হব না।"

 নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.)  আবুল ফজল মো.  সানাউল্লাহ বলেন, "বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে।  একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে।  আমরা কোনো সহিংসতা বা অনিয়ম দেখতে চাই না।  তবে একা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এটি সম্ভব নয়, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।"

 ভোটার তালিকার হালনাগাদ পরিসংখ্যান

 সভায় এনআইডি মহাপরিচালক জানান, চলমান হালনাগাদ কার্যক্রমে ভোটার তালিকা থেকে ১৯ লাখ মৃত ভোটার বাদ দেওয়া হয়েছে এবং নতুন করে ৫৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬৩ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

 অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকসহ নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।