মুসলমানদের জন্য পবিত্র রমজান মাসে যারা রোজা রাখেন, তারা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাবার, পানীয় বা কোনো কিছু মুখে দেন না। এই বছর মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে রোজা শুরু হচ্ছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে বিভিন্ন বয়সের অধিকাংশ মানুষই এই সময় রোজা রাখেন।
বিশ্বব্যাপী মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, রমজান মাসে স্বেচ্ছায় নিয়ন্ত্রণ এবং দীর্ঘ সময় ধরে প্রার্থনা করে আত্মশুদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। তাই তারা ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী রোজা পালন করেন, যদিও কিছু বিষয়ে ধর্মে সরাসরি নির্দেশনা না থাকলেও তা মান্য করা হয়। রোজা নিয়ে ধর্মীয় নির্দেশনা, প্রচলিত ভুল ধারণা এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে অনেকেই গুগলে প্রশ্ন করেন। এই প্রতিবেদনে গুগলে করা কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে।
রোজা ভঙ্গের কারণগুলো
ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, রোজা ভঙ্গের প্রধান কারণ পাঁচটি:
ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার খাওয়া
ইচ্ছাকৃতভাবে পানি পান করা
শরীর থেকে রক্ত বের হওয়া
মুখ ভর্তি বমি হওয়া
রোজা অবস্থায় যৌন সম্পর্ক স্থাপন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “রক্তপাত বা বমির কারণে রোজাদার ব্যক্তি অসুস্থ অনুভব করতে পারেন, এজন্য এসব ক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।”
রোজা নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা
অনেক ভুল ধারণা রয়েছে, যেগুলো রোজা ভঙ্গের কারণ মনে করা হয়, তবে প্রকৃতপক্ষে এগুলো রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার কোনো কারণ নয়। এর মধ্যে কিছু সামাজিক চাপ ও ভুল বিশ্বাসের কারণে মানুষ অস্বস্তিতে পড়ে। অধ্যাপক শামছুল আলম জানান, “এগুলো মানুষের অজ্ঞতা বা আধুনিক শিক্ষার অভাবের কারণে ঘটে।”
রোজা ভেঙে যাওয়ার কিছু ভুল ধারণা:
মুখের লালা গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যায়:
এটি একটি প্রচলিত ধারণা যে মুখের লালা গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যায়। তবে অধ্যাপক শামছুল আলম এ বিষয়ে বলেন, “মুখের লালা গিলে ফেললে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। তবে অন্য কারও মুখের লালা গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে।”
দাঁত ব্রাশ করা যাবে না:
অনেকে মনে করেন রোজা অবস্থায় দাঁত ব্রাশ করা যাবে না, কিন্তু এটি সঠিক নয়। অধ্যাপক বলেন, “দাঁত ব্রাশ করলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না, তবে পেস্ট গলায় চলে গেলে তা মাকরূহ (অপছন্দনীয়) হতে পারে, তাই সাহরী খাওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করা ভালো।”
নখ ও চুল কাটা যাবে না:
এটি একদম ভুল ধারণা। অধ্যাপক আলম বলেন, “নখ বা চুল কাটার মাধ্যমে রোজা ভেঙে যায় না, কারণ এতে রক্ত প্রবাহিত হয় না।”
দাড়ি কামানো যাবে না:
পুরুষরা রোজা রাখার সময় দাড়ি কামাতে পারবেন। তবে সাবধান থাকতে হবে, যাতে গাল কেটে রক্ত না বেরিয়ে আসে।
রমজানে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না:
রমজান মাসে সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না শুধুমাত্র রোজা থাকার সময়। রোজা না থাকলে কোনো বাধা নেই।
সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না:
অনেকের ধারণা রোজা রেখে সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না, কিন্তু অধ্যাপক আলম জানান, “আতর ব্যবহার করতে পারবেন, এটি নবীর সুন্নত।” তবে পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ এতে চর্বি থাকতে পারে।
ভুল করে পানাহার করলে রোজা ভেঙে যায়:
এটি ভুল ধারণা। অধ্যাপক আলম বলেন, “মনে ভুলে খাবার খেলে রোজা ভেঙে যায় না, তবে তা মাকরূহ হতে পারে। ইচ্ছাকৃতভাবে খেলে রোজা ভেঙে যাবে।”
রোজা রেখে ঔষধ খাওয়া যাবে না:
ঔষধ খাওয়ার বিষয়েও অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অধ্যাপক বলেন, “যে ঔষধ পেটে যায়, তা রোজা ভেঙে দেয়, কিন্তু চোখ বা নাকে ড্রপ দেওয়া যায়।”
ধূমপান রোজা ভেঙে দেয়:
ধূমপান শুধু রোজার সময় নয়, সারা সময়েই হারাম। এটি শুধু সেবনকারীর ক্ষতি করে না, অন্যদেরও ক্ষতি করতে পারে, তাই রোজা অবস্থায় ধূমপান করলে রোজা ভেঙে যাবে।
রান্নার স্বাদ নেয়া যাবে না:
রান্নার সময় খাবারের স্বাদ নেয়া যেতে পারে, তবে তা জিহ্বায় লাগিয়ে পরে ফেলতে হবে।
কোনো কেউ রোজা রাখতে পারেন না
ইসলামে প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজা ফরজ। শিশু, অসুস্থ, দুর্বল, ভ্রমণকারী, অন্তঃসত্ত্বা বা বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীর জন্য রোজা ফরজ নয়, তবে অনেক পরিবার শিশুদেরও উৎসাহিত করে রোজা রাখার জন্য।
শেষ কথা
রোজা সম্পর্কিত বিভিন্ন ভুল ধারণা দূর করে সঠিক তথ্য জানা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে রোজা পালনকারী ব্যক্তি কষ্ট না পান এবং তার আশেপাশের মানুষও সঠিকভাবে সাহায্য করতে পারে।
0 Comments