ফিলিস্তিন এক পবিত্র ভূমি, যেখানে রয়েছে মসজিদুল আকসা—ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। কিন্তু এই ভূমি যুগ যুগ ধরে অন্যায়, অবিচার ও দখলদারিত্বের শিকার। ফিলিস্তিনের নিরীহ জনগণ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নির্যাতিত হয়ে আসছে, তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে, আর তাদের অস্তিত্ব বিলীন করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবুও, তারা আজও অবিচল, তারা আজও সংগ্রাম করে যাচ্ছে।

ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ: একটি সংগ্রামের ইতিহাস

ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর ইসরায়েলের দখলদারিত্ব এবং নিপীড়ন নতুন কিছু নয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজ ভূমিতে পরবাসী হয়ে যায়। লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে শরণার্থী হতে বাধ্য করা হয়। এই জুলুমের শুরু তখনই, যা আজও চলছে।

১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। তারপর থেকে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা আরও সংকুচিত হয়ে যায়। ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে অবৈধ বসতি স্থাপন করা হয়, তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়, তাদের জীবনযাত্রা কঠিন থেকে কঠিনতর করে তোলা হয়।

কিন্তু এই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা কখনো নতি স্বীকার করেনি। তারা প্রতিরোধ করে আসছে, তারা তাদের ভূমির জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রতিরোধই একদিন তাদের বিজয়ের পতাকা উড়াবে, ইনশাআল্লাহ।

ফিলিস্তিনের বিজয়ের আশা

অনেকেই প্রশ্ন করে—ফিলিস্তিন কি কখনো মুক্ত হবে? তাদের বিজয়ের পতাকা কি সত্যিই একদিন উড়বে? ইতিহাস বলে, অন্যায় কখনো চিরস্থায়ী হতে পারে না। জুলুমের পরিণতি ধ্বংস, আর প্রতিরোধের ফলাফল বিজয়। ফিলিস্তিনিরাও সেই সত্যের পথে লড়াই করছে।

১. ন্যায়ের বিজয় অবশ্যম্ভাবী

ইসলামের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, সত্যের ওপর যারা অবিচল থাকে, তাদের পরাজিত করা যায় না। হযরত মুসা (আ.) এর সময় ফেরাউন যতই অত্যাচার করুক, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাকে ধ্বংস করেছেন। তেমনি ফিলিস্তিনের মজলুম জনগণের প্রতিও আল্লাহর সাহায্য আসবে।

২. বিশ্বজনমতের পরিবর্তন

আগে অনেক দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়াতে ভয় পেত, কিন্তু এখন বিশ্বজুড়ে মানুষ ফিলিস্তিনের জন্য আওয়াজ তুলছে। সোশ্যাল মিডিয়া, আন্তর্জাতিক ফোরাম এবং বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের দুঃখ-দুর্দশা সবার সামনে উঠে আসছে। একসময় এই জনমতই ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটাবে।

৩. ফিলিস্তিনিদের অবিচল প্রতিরোধ

ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা কখনো মাথা নত করেনি। তারা অস্ত্র ছাড়াও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তাদের ধৈর্য, সংহতি, এবং ত্যাগের মাধ্যমে তারা বারবার প্রমাণ করেছে যে, তারা কখনো তাদের অধিকারের দাবিতে পিছপা হবে না।

৪. ইসলামের ইতিহাসে বিজয়ের দৃষ্টান্ত

ইতিহাসে আমরা দেখেছি, আল্লাহ তায়ালা যখনই তার বান্দাদের পরীক্ষা নিয়েছেন, তখনই তিনি তাদের জন্য পথ খুলে দিয়েছেন। হজরত মুহাম্মাদ (স.) এবং সাহাবাদের মক্কায় নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল, কিন্তু অবশেষে তারা বিজয় অর্জন করেছিলেন। ইনশাআল্লাহ, ফিলিস্তিনও একদিন বিজয় লাভ করবে।

বিজয়ের পথ কীভাবে আসবে?

ফিলিস্তিনের বিজয় আসবে যদি আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের পাশে দাঁড়াই।

১. আল্লাহর ওপর ভরসা ও দোয়া

প্রথম ও প্রধান কাজ হলো আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা। আমাদের সকলকে ফিলিস্তিনের জন্য দোয়া করতে হবে, কারণ আল্লাহই একমাত্র সহায়। তিনি চান তো মুহূর্তেই সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

২. জনমত গঠন ও প্রচার

আমরা সবাই যদি ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলি, সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতা বৃদ্ধি করি, তাহলে বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতি আরও বাড়বে। আন্তর্জাতিক চাপ বাড়লে ইসরায়েলের অন্যায় থামানো সম্ভব হতে পারে।

৩. অর্থনৈতিক প্রতিরোধ

ইসরায়েলের অর্থনীতি অনেকাংশেই নির্ভর করে মুসলিম বিশ্বসহ অন্যান্য দেশের ওপর। তাদের পণ্য বর্জন করলে তাদের দখলদার নীতি দুর্বল হয়ে পড়বে।

৪. ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ

ফিলিস্তিনিদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য থাকা জরুরি। যদি তারা বিভক্ত থাকে, তাহলে শত্রুরা সহজেই তাদের দুর্বল করতে পারবে।

৫. রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন

মুসলিম দেশগুলোর উচিত ফিলিস্তিনের পক্ষে কূটনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থান নেওয়া। আন্তর্জাতিক ফোরামে ফিলিস্তিনের অধিকারের পক্ষে কথা বলা এবং ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

বিজয়ের পতাকা: ফিলিস্তিনের মুক্তির প্রতীক

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বপ্ন শুধু একটি রাজনৈতিক বিষয় নয়, এটি পুরো মুসলিম উম্মাহর আত্মার সাথে জড়িত। একদিন ইনশাআল্লাহ, ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণ মুক্তি পাবে, মসজিদুল আকসার আঙিনায় স্বাধীনতার বাতাস বইবে, এবং ফিলিস্তিনের আকাশে তাদের বিজয়ের পতাকা উড়বে।

ফিলিস্তিনের পতাকা হলো তাদের সংগ্রামের প্রতীক। এই পতাকা লাল, সবুজ, সাদা ও কালো রঙের, যা প্রতীকী অর্থ বহন করে—

  • লাল: স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ
  • সবুজ: ইসলামের পরিচয়
  • সাদা: শান্তি ও আশার বার্তা
  • কালো: শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলা সংগ্রাম

যখন এই পতাকা স্বাধীন আকাশে উড়বে, তখন ফিলিস্তিনের শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না।

শেষ কথা

ফিলিস্তিনের জন্য বিজয় অবশ্যম্ভাবী। কারণ ইতিহাস বলে, অন্যায় বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াই, তাদের জন্য দোয়া করি, তাদের জন্য সচেতনতা তৈরি করি, তাহলে ইনশাআল্লাহ, একদিন তাদের মুক্তির সকাল আসবেই।

ফিলিস্তিনের বিজয়ের দিন যেদিন আসবে, সেদিন সমগ্র উম্মাহ আনন্দে উদযাপন করবে। আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় আছি, যখন ফিলিস্তিনের মুক্ত বাতাসে স্বাধীনতার পতাকা উড়বে, যখন শিশুরা ভয়হীনভাবে হাসতে পারবে, যখন আর কোনো মা তার সন্তানকে হারানোর কষ্টে কাঁদবে না।

হে আল্লাহ, আপনি ফিলিস্তিনের বিজয় দান করুন, তাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিন, তাদের শহীদদের জান্নাত দান করুন এবং জালিমদের ধ্বংস করুন। আমিন।