গাজা যুদ্ধে প্রযুক্তি সহায়তা: মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে উত্তাল প্রতিবাদ, চাকরি হারালেন কর্মীরা
প্রজেক্ট ‘আজোর’ ঘিরে বিতর্কে জড়িয়েছে মাইক্রোসফট। অভিযোগ— ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে ক্লাউড ও এআই প্রযুক্তি সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মীদের প্রতিবাদের মুখে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে অন্তত দুজনকে।
চলতি বছরের শুরুতে চরম বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান ইবতিহাল আবুসাদ, কানাডা-ভিত্তিক মরোক্কান বংশোদ্ভূত এক সফটওয়্যার প্রকৌশলী। তিনি মাইক্রোসফটের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) বিভাগে কাজ করছিলেন। হঠাৎ করেই তিনি জানতে পারেন, তার লেখা কোড ব্যবহৃত হচ্ছে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গাজা অভিযান পরিচালনায়।
‘প্রজেক্ট আজোর’: বিতর্কিত প্রযুক্তি চুক্তি
‘প্রজেক্ট আজোর’ নামের এক গোপন প্রকল্পের আওতায় মাইক্রোসফট ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে AI, মেশিন লার্নিং ও ক্লাউড কম্পিউটিং সুবিধা দিচ্ছে—এমন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। অভিযোগে বলা হয়, সেনাবাহিনীর কুখ্যাত ইউনিট ৮২০০, ইউনিট ৮১ এবং ওফেক এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তথাকথিত ‘হত্যা তালিকা’ তৈরিতে।
কর্মীদের প্রতিবাদ ও পদক্ষেপ
"No Azure for Apartheid" is a good thing, but it's not enough. ৪ এপ্রিল, মাইক্রোসফটের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আবুসাদ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানান। “Mustafa, shame on you!” — একই অনুষ্ঠানে ভানিয়া আগরওয়াল নামে আরেক কর্মী সরাসরি বিল গেটস, স্টিভ বালমার এবং সিইও সত্য নাদেলার উদ্দেশে বলেন, “গাজার ৫০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে মাইক্রোসফটের প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আপনারা উৎসব করছেন?”
চাকরিচ্যুতি ও প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর মাইক্রোসফট তাৎক্ষণিকভাবে দুই কর্মীকে চাকরিচ্যুত করে। অভিযোগ করা হয়, তারা “ইচ্ছাকৃত অবাধ্যতা ও দায়িত্বে অবহেলা” করেছেন। কর্মীদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ বললেও প্রকৃতপক্ষে ভিন্নমত সহ্য করে না। অভিযোগ রয়েছে, কেউ প্রতিবাদ করলে তার ইমেইল বন্ধ করে দেওয়া হয়, অ্যাকাউন্ট লক করে দেওয়া হয়।
আবুসাদ বলেন, “তারা মুখে বলে স্বাধীনতা, কিন্তু ভেতরে প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব কাজ করে।”
প্রতিবাদের ঢেউ ও বৃহত্তর প্রেক্ষাপট
ওয়াশিংটনের রেডমন্ডে মাইক্রোসফট সদর দপ্তরের বাইরে ব্যাপক প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা হোসাম নাসর বলেন, “কর্মীরা জানে তারা চাকরি হারাতে পারে, তবু তারা প্রতিবাদ করছে—এটাই বলে দেয় প্রতিষ্ঠানটি কতটা নৈতিক বিচ্যুতিতে ভুগছে।”
প্রযুক্তি বিশ্বের দায়
মাইক্রোসফট ছাড়াও গুগল ও অ্যামাজন ‘প্রোজেক্ট নিম্বাস’-এর মাধ্যমে ইসরাইলের সঙ্গে ১.২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে, যেখানেও রয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। ফিলিস্তিনিদের ওপর নজরদারি, ডেটা সংগ্রহ এবং হামলা পরিকল্পনায় এসব প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
বর্জনের ডাক
বিডিএস (Boycott, Divestment, Sanctions) আন্দোলন ইতিমধ্যে মাইক্রোসফটের বেশ কিছু গেমিং পণ্য—Xbox, Minecraft, Call of Duty, Candy Crush—কে ‘বর্জনযোগ্য’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
উপসংহার: প্রতিবাদের নতুন ভাষা
ওয়াশিংটনের এই প্রতিবাদ কেবল মাইক্রোসফট নয়, বরং পুরো প্রযুক্তি খাতের নৈতিক দায়ের ওপর আঙুল তুলেছে। যখন এআই ও ক্লাউড প্রযুক্তি সরাসরি জীবনের কিংবা মৃত্যুর প্রশ্নে যুক্ত হয়ে পড়ছে, তখন প্রযুক্তি কর্মীদের মুখ খুলে দাঁড়ানো সময়েরই দাবি।
0 Comments