শতভাগ উৎসব ভাতা ও জাতীয়করণের দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলন অব্যাহত



আসন্ন ঈদুল ফিতরে শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। তারা এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, শতভাগ উৎসব ভাতা, সরকারি কর্মচারীদের সমপরিমাণ বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা নিশ্চিত করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

‘এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’-এর ব্যানারে কয়েকটি শিক্ষক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এই মোর্চা গত আট দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। আন্দোলনকারীরা জানান, শতভাগ উৎসব ভাতা ও অন্যান্য ভাতা বাড়ানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।

বুধবার দুপুরে তারা তাদের দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনার দিকে পদযাত্রা শুরু করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিক্ষক সমাবেশ ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা।

জোটের সদস্য সচিব দেলাওয়ার হোসেন আজীজী জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকারি কোষাগার থেকে বেতন পেলেও নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, “শিক্ষকরা মূল বেতনের মাত্র ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা পান। সরকার কোনো বাড়িভাড়া দেয় না, চিকিৎসা ভাতা বাবদ মাত্র ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। আমরা এসব বৈষম্যের অবসান চাই।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা আট দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। মঙ্গলবার সচিবালয়ের দিকে পদযাত্রা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর আমরা কর্মবিরতি পালন করেছি। বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে পদযাত্রা করলেও পুলিশ সেখানে বাধা দেয়। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার শিক্ষক সমাবেশ এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মবিরতি পালন করা হবে।”

শতভাগ উৎসব ভাতা ও অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের আশ্বাসের অভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা ঈদের আগেই শতভাগ উৎসব ভাতা চাই। একইসঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের মতো বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে লিখিত আদেশ বা প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বর্তমানে ৩১,৮২৬টি। এর মধ্যে ১৭,৬৩৪টি স্কুল, ২,৮৬৮টি কলেজ, ৯,১০২টি মাদ্রাসা এবং ২,২২২টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন।

জোটের যুগ্ম সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের (বাশিফ) নেতা মো. হাবিবুল্লাহ রাজু বলেন, “আমলাদের ঈদ পূর্ণাঙ্গ, আর শিক্ষকদের ঈদ কি সিকিভাগ? আমরা শতভাগ উৎসব ভাতা চাই। পাশাপাশি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়ের অর্থ সরকারি কোষাগারে নিয়ে এসে সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা দেওয়া হলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হবে না।”

শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের এক অধিবেশনে তিনি বলেন, “শিক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত হলেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। তাদের জন্য যতটুকু করা সম্ভব, আমরা চেষ্টা করব। আমরা সীমিত বাজেটের মধ্যেই তাদের ভাতা বাড়ানোর উপায় খুঁজছি।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকদের অবসরকালীন সুবিধা তাদের ন্যায্য অধিকার। সরকারকে এই অর্থ না দেওয়া অনৈতিক। তবে এটি এক বছরের বাজেটের ওপর চাপিয়ে সমাধান করা যাবে না। আমরা বন্ডের মাধ্যমে একটি ফান্ড তৈরির পরিকল্পনা করছি, যা আগামী বছর থেকে কার্যকর হতে পারে।”