২৪ বছর পর প্রেমের টানে বরগুনায় ডেনমার্কের মারিয়া

ভালোবাসা যদি সত্য হয়, তাহলে সেটি কখনো হারিয়ে যায় না—সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা শুধু অপেক্ষার আরেকটি নাম হয়ে ওঠে। আর এই চিরন্তন সত্যটিই আবারও প্রমাণ করলেন বরগুনার সাংবাদিক মাহবুবুল আলম মান্নু ও ডেনিশ নাগরিক রোমানা মারিয়া বসি।

দীর্ঘ ২৪ বছরের বিচ্ছেদ পেরিয়ে, এক সময়ের প্রেমিকা এবং স্ত্রী মারিয়া ফের ফিরে এসেছেন তার প্রথম ভালোবাসার মানুষ মান্নুর কাছে। সুদূর ডেনমার্ক থেকে আসা এই সফর কেবল একটি ভ্রমণ নয়—এ যেন অতীতকে আলিঙ্গন করে নতুন করে ভবিষ্যতের পথচলা।

গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বরগুনায় পৌঁছান মারিয়া। রাতেই শহরের থানাপাড়ার মান্নুর বাড়িতে এক ঘরোয়া আয়োজনে সম্পন্ন হয় তাদের পুনরায় বিয়ে। এতে মেয়েপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন বরগুনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সোহেল হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মো. সালেহ।

প্রেমের শুরু, বিচ্ছেদ আর অপেক্ষার কাহিনি

১৯৯৬ সালে ডেনমার্কে পরিচয়, এরপর প্রেম—আর সেখান থেকেই মাহবুবুল ও মারিয়ার জীবন গাঁথা হয় এক সুতোয়। বিয়ের পর ১৯৯৭ সালে মারিয়াকে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন মান্নু। বরগুনায় তারা খুলেছিলেন একটি বেসরকারি ক্লিনিক। প্রথমদিকে সব ঠিকঠাক চললেও, ব্যবসায় ধস নামলে শুরু হয় সংসার টানাপড়েন।

২০০০ সালে মান্নুর ইচ্ছাতেই মারিয়া ফিরে যান নিজ দেশে। শর্ত ছিল, মান্নুও সব কিছু গুছিয়ে দ্রুতই তার কাছে যাবেন। কিন্তু ভাগ্য ভিন্ন ছক এঁকেছিল—পারিবারিক জটিলতায় আর ফেরা হয়নি মান্নুর। ধীরে ধীরে তাদের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

২০০৩ সালের পর আর কোনো যোগাযোগ ছিল না। মান্নু পরিবারকে মেনে নতুন জীবনের পথে মারিয়াকে এগিয়ে যেতে বলেন। আর সেই কথায় দীর্ঘশ্বাস চেপে, নিঃসঙ্গতার হাত ধরে একে একে কেটে যায় দুই যুগ।

পুরনো প্রেম, নতুন করে খোঁজ

তবে হারিয়ে যাননি কেউই। মান্নু নিজের পেশাগত জীবন সাংবাদিকতায় গড়েছেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক ‘আমাদের সময়’-এর বরগুনা জেলা প্রতিনিধি এবং জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি। অন্যদিকে, মারিয়া ডেনমার্কে সিটি করপোরেশনে চাকরি করলেও হৃদয়ে মান্নুর জন্য রয়ে গেছে এক শূন্যতা।

বিচ্ছেদের পর অনেক বছর কেটে গেছে। কিন্তু একসময় সম্পর্কের খোঁজে মারিয়া আবারও উদ্যোগ নেন। অবশেষে প্রযুক্তির আশীর্বাদে—২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ফেসবুকে পুনরায় সংযোগ ঘটে তাদের। শুরু হয় আবার কথা, আবার আবেগ, আবার প্রেম।

“আবার বিয়ের প্রস্তাব তিনিই দিয়েছেন”

ফেরার গল্পটি যেন ঠিক সেভাবেই এগিয়েছে, যেমনটা হয় ভালোবাসার উপন্যাসে। মারিয়া নিজের কর্মস্থল থেকে মাত্র ১০ দিনের ছুটি নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান মান্নু নিজেই। আর রাতে সেই পুরনো প্রেমকে আবার বৈধতার ছায়ায় জড়িয়ে ধরেন তারা—একটি নতুন বিয়ের মাধ্যমে।

মান্নু বলেন, "২৪ বছর যোগাযোগ ছিল না। ফেসবুকের মাধ্যমে হঠাৎ করেই মারিয়া যোগাযোগ করে। তিনি এখন ডেনমার্কে একটি সিটি করপোরেশনে চাকরি করছেন। যদি আমি না যাই, তবে তিনি আগামী মাসে চাকরি ছেড়ে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে চলে আসবেন।"

ভালোবাসার শেষ নেই

তাদের এই পুনর্মিলনের গল্প যেন প্রমাণ করে—ভালোবাসা হারায় না, শুধু সময় নেয় নিজেকে আবার প্রকাশ করতে। আর যখন তা ফিরে আসে, তখন আর কোনো বাধাই বড় হয়ে ওঠে না।