রাউজানে একের পর এক খুন, আতঙ্কে এলাকা ছাড়ছে পরিবারগুলো

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা পরিণত হয়েছে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ মঞ্চে। গত আট মাসে সংঘটিত হয়েছে ১২টি খুন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক কর্মী, ব্যবসায়ী, এমনকি একজন গৃহকর্মচারীও। হত্যার ধরন গুলি করে, পিটিয়ে বা নিখোঁজের পর লাশ উদ্ধারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, বেড়ে গেছে এর রাজনৈতিক জটিলতাও।

সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা যুবদলকর্মী মানিক আবদুল্লাহ হত্যাকাণ্ড। বাড়িতে রাতের খাবার খাওয়ার সময় মুখে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। তাঁর স্ত্রী চেমন আরা থানায় মামলা করতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়, যা পুলিশের গড়িমসির আরেকটি উদাহরণ।

এমন ঘটনা শুধু মানিকের নয়। ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম, শ্রমিক লীগ নেতা আবদুল মান্নান, যুবলীগকর্মী হাসানসহ বেশ কয়েকজন হত্যার শিকার হয়েছেন, কিন্তু অধিকাংশ মামলায় আসামির ঘরে লেখা ‘অজ্ঞাতনামা’। ১২টি খুনের মধ্যে ১০টির মামলাতেই কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। বাদীদের অভিযোগ, পুলিশ একাধিকবার মামলা নিতে গড়িমসি করেছে, এমনকি নাম উল্লেখ করলেও আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

পুলিশের তরফে বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক চাপে তারা কার্যত অচল। অধিকাংশ মামলায় অভিযুক্তরা বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা গিয়াস কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী। থানায় এসব নেতার প্রতিনিধিরা বসে থেকে ঠিক করেন, কার নামে মামলা হবে, কার হবে না। তবে নেতারা বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশকেই দায়ী করছেন নিষ্ক্রিয়তার জন্য।

রাউজানের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিহতদের পরিবার এখন ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এরকম অন্তত চারটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখনো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

এসব ঘটনা সরকারের উচ্চপর্যায়েও পৌঁছেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রেঞ্জ ডিআইজিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।' তবুও বাস্তবতা হলো, রাউজানে খুনের তালিকা থামছে না, বরং লম্বা হচ্ছে।

প্রতিবন্ধকতা কোথায়?

  • ১২টি খুনের মধ্যে ৯টিতে আসামি 'অজ্ঞাত'।

  • রাজনৈতিক প্রভাবে মামলার তদন্তে গতি নেই।

  • হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মাত্র কয়েকজন।

  • থানার ওসি চারবার বদল হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

রাউজান যেন আজ আইনশৃঙ্খলার নামে এক অচলাবস্থার প্রতিচ্ছবি। প্রশ্ন উঠেছে, কবে থামবে এই খুনের মিছিল? কবে পাবে পরিবারগুলো ন্যায়বিচার?