‘আত্মসমর্পণই শর্ত’—ইসরাইলের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল হামাস

গাজায় সক্রিয় সব সশস্ত্র গোষ্ঠীর আত্মসমর্পণের শর্তে দেয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। সংগঠনটি বলছে, যুদ্ধবিরতির নামে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে চায়, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা সামি আবু জুহরি আল-জাজিরাকে বলেন, “আমাদের জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে হামাস সব যুক্তিসংগত প্রস্তাবের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু ইসরাইলি প্রস্তাবে আত্মসমর্পণের যে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তা একতরফা ও অবাস্তব।”

তিনি অভিযোগ করেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়াকে ব্যর্থ করে দিতে এমন শর্ত দিয়েছেন। “এই প্রস্তাবে পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি নেই, কেবল বন্দি মুক্তির আহ্বান রয়েছে।”

হামাস জানায়, তারা ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তি ও নিহতদের মরদেহ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তুত—তবে এর বিনিময়ে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। সামি আবু জুহরি বলেন, “হামাস আত্মসমর্পণ করবে না, কোনো সাদা পতাকা ওড়াবে না।”

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের মূলধারা:

ইসরাইলের ১২ দফার প্রস্তাবে ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা রয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রথম সপ্তাহে হামাসকে তার হাতে থাকা বন্দি ইসরাইলিদের অর্ধেক মুক্তি দিতে হবে। এর বিনিময়ে গাজায় খাবার ও পানি প্রবেশের অনুমতি দেবে ইসরাইল।

তবে মানবিক সহায়তা প্রবেশে দীর্ঘদিন ধরে বাধা দিয়ে আসছে দখলদার বাহিনী। প্রায় ৬ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি এমনকি ভোজ্যতেলও গাজায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

‘প্যালেস্টাইন এনজিও নেটওয়ার্ক’ (PNON) সতর্ক করেছে—গাজার পরিস্থিতি এখন ‘দুর্ভিক্ষের চূড়ান্ত পর্যায়ে’। ইসরাইলি হামলায় ধ্বংস হয়েছে খাদ্যগুদাম, পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট ও কমিউনিটি রান্নাঘরগুলো।

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ:

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়ভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইতোমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। জাতিসংঘের একাধিক বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার সংগঠন ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় পরিকল্পিত গণহত্যা চালানোর অভিযোগ করে আসছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলি বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলায় গত ১৮ মার্চ থেকে নিহত হয়েছেন অন্তত ১,৫৭৪ জন ফিলিস্তিনি। অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৫০,৯৪৪ জন।