হঠাৎ যুদ্ধবিরতিতে ভারত-পাকিস্তান, আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন

চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এই চমকপ্রদ ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতভর আলোচনার পর এই সমঝোতায় পৌঁছেছে দুই দেশ।

শনিবার ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, “সাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও দুরদৃষ্টির জন্য দুই দেশকেই শুভেচ্ছা!”

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, ভারত ও পাকিস্তান একটি নিরপেক্ষ স্থানে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় তিনি ও সিনেটর জে.ডি. ভ্যান্স দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন।

বিশ্বজুড়ে এই হঠাৎ যুদ্ধবিরতি বেশ বড় ধরনের কূটনৈতিক আলোড়ন তুলেছে। এসওএএস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুবীর সিনহা একে সীমান্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা হিসেবে দেখলেও ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানের দিক থেকে এটিকে একটি “পিছু হটার সিদ্ধান্ত” বলে উল্লেখ করেছেন।

তার ভাষায়, “মোদি সরকারের শক্ত অবস্থানের মূল নীতির মধ্যে ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে বিস্তৃত আলোচনায় না যাওয়া। এখন সেই অবস্থান থেকে সরে আসা একপ্রকার নীতিগত বিপর্যয়।”

সামরিক খরচ ও সংঘর্ষের প্রেক্ষাপট

বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধের আর্থিক চাপও এই হঠাৎ যুদ্ধবিরতির পেছনে বড় কারণ। জিও নিউজ জানায়, চার সপ্তাহ ধরে চলা সংঘর্ষে উভয় দেশের সম্মিলিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

  • ভারতীয় বিমানবাহিনী (IAF) প্রতিদিন গড়ে ১০০টি অভিযান চালিয়েছে, যার খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার

  • ড্রোন ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধের জন্য দৈনিক খরচ ১০০ মিলিয়ন ডলার, চার সপ্তাহে মোট ৩ বিলিয়ন

  • ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে খরচ মাসে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার

  • প্রতিদিনের সামরিক মোতায়েন, আকাশ প্রতিরক্ষা ও নৌবাহিনী পরিচালনায় ব্যয় প্রায় ৫.৪ বিলিয়ন ডলার

পাল্টাপাল্টি হামলা ও ক্ষয়ক্ষতির দাবি

পাকিস্তানের দাবি, তারা ভারতের এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। একই সঙ্গে ভারত জানায়, ৮ ও ৯ মে’র রাতে পাকিস্তান ৩০০-৪০০টি ড্রোন দিয়ে ভারতের ৩৬টি স্থানে হামলা চালায়।

ভারতের পাল্টা অভিযানে ‘অপারেশন সিদুঁর’-এ পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরের ৯টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। পাকিস্তানের দাবি, তারা এ সময় ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে ৩টি রাফাল, ধ্বংস করেছে এবং ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।

ভারতের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ

বিশ্লেষক সুবীর সিনহার মতে, ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে এই যুদ্ধবিরতি মোদি সরকারের কৌশলগত অবস্থানের বিরোধিতা করতে পারে। বিশেষ করে দেশের ভেতরে উগ্র জাতীয়তাবাদী মহলে অসন্তোষ বাড়তে পারে, যারা বরাবরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা দাবি করে এসেছে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে—“ভারত কি নিজের পায়েই কুড়াল মারল?” কারণ সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে উচ্চস্বরে বক্তব্য রেখে শেষে আলোচনায় বসা সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ও ভবিষ্যৎ কৌশলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।