ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির খবরে পাকিস্তানজুড়ে উৎসবের আমেজ, রাস্তায় মিষ্টি বিতরণ

ভারতের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে স্বস্তি ও উচ্ছ্বাসের পরিবেশ ছড়িয়ে পড়েছে। লাহোর, ইসলামাবাদ, মুজাফফরাবাদসহ নানা এলাকায় মানুষ রাস্তায় নেমে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠেন। অনেকে এই যুদ্ধবিরতিকে জাতীয় গর্ব ও বহুদিনের প্রতীক্ষিত শান্তির মুহূর্ত হিসেবে দেখছেন।

লাহোরের এক তরুণ, মোহাম্মদ ফাতেহ বলেন, “আজ পাকিস্তানের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। আমাদের বাহিনী শক্ত প্রতিরোধ গড়েছে, যার ফলে ভারত বাধ্য হয়েছে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নিতে।”

ইসলামাবাদের ৪৫ বছর বয়সী গৃহিণী যুবাইদা বিবির ভাষ্য, “যুদ্ধ শুধু দুঃখ আর ক্ষতির বার্তা নিয়ে আসে। এখন শান্তির যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা আমাদের জন্য ঈদের আনন্দের মতো। আমরা মনে করি, আমরা জয়ী হয়েছি।”

পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদেও যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে সংঘাতের মধ্যে থাকা এই অঞ্চলের মানুষ এবার শান্তি ও স্থিতিশীলতার আশা করছেন।

“আমাদের জন্য শান্তির অর্থই বেঁচে থাকা,” বলেন মুজাফফরাবাদের বাসিন্দা জুলফিকার আলী। “আমরা বহু কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছি। এখন দুই দেশ বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরপরই পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমে পড়েন সাধারণ মানুষ। অনেক জায়গায় উৎসবের মতো পরিবেশ তৈরি হয় এবং মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায়।

এর আগে শনিবার, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির বিষয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে জানান। পরে ভারত ও পাকিস্তান উভয় পক্ষ থেকেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট) থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। জিও নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, এ যুদ্ধবিরতির পেছনে অন্তত ৩০টি দেশের কূটনৈতিক ভূমিকা রয়েছে। বিশেষভাবে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর ভূমিকার প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, “পাকিস্তান সবসময় আঞ্চলিক শান্তির পক্ষে থেকেছে, তবে নিজের সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে নয়।”

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজিএমও) বিকেলে তার ভারতীয় সমকক্ষকে ফোন করে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছান।

সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে মিশ্রি জানান, “উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে যে, স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম ভারতীয় সময় বিকেল ৫টা থেকে বন্ধ থাকবে।”

তিনি আরও জানান, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের জন্য উভয় দেশের বাহিনীকেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী পর্যায়ে দুই দেশের সামরিক মহাপরিচালকেরা ১২ মে দুপুর ১২টায় আবারও আলোচনায় বসবেন।