তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি নিঃশব্দে শুরু হয়ে গেছে?
৮০ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান উপলক্ষে যখন বিশ্বের নানা প্রান্তে মিত্রশক্তির সদস্যরা আলাদাভাবে স্মরণসভা করছে, তখন বর্তমান বাস্তবতা যেন এক ভয়াবহ প্রশ্ন তুলে ধরছে—আমরা কি এক নতুন, নিঃশব্দ অথচ বিস্তৃত যুদ্ধের ভেতর ঢুকে পড়েছি?
প্যাক্স আমেরিকানার পতন, ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের উত্থান এবং নিয়মভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থার ভাঙন—সবকিছু মিলিয়ে এক অস্থির, অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক যুগে প্রবেশ করছি আমরা।
ব্রিটিশ সরকারের উপদেষ্টা ফিওনা হিল সরাসরি বলছেন, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা তা স্বীকার করতে সাহস পাচ্ছি না।’ তার এই বক্তব্যকে উড়িয়ে দেওয়া কঠিন, বিশেষত যখন বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের বিস্তার, যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি ও ইউরোপের পুনর্জাগরণ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।
সহিংসতা, যুদ্ধ, ও কূটনৈতিক শূন্যতা
গাজায় আন্তর্জাতিক আদেশ অমান্য করে তিন মাসের ত্রাণ অবরোধ, ইসরাইলের একযোগে গাজা, ইয়েমেন, লেবানন ও সিরিয়ায় বোমাবর্ষণ—এসবই যুদ্ধাপরাধের সামিল। তবুও পশ্চিমা জোট নীরব। বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে ‘চরম লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দিলেও কার্যকর প্রতিক্রিয়া অনুপস্থিত।
মার্কিন কূটনীতির দ্বিধাগ্রস্ততা আরও প্রকট ইউক্রেন ও গাজার সংকটে। এ অবস্থায় রাশিয়া, চীন, ইরান ও উত্তর কোরিয়া মিলে এক নতুন অক্ষশক্তির জন্ম দিচ্ছে, যা স্পষ্টভাবে পশ্চিমা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছে। ফিওনা হিল এই যুদ্ধকে বলছেন “সিস্টেম-চেঞ্জিং” সংঘাত।
ইউরোপীয় প্রতিরক্ষার পুনর্জাগরণ
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা দুর্বল হয়ে পড়ায় ইউরোপ নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিচ্ছে। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও পোল্যান্ড নিয়ে Weimar+ নামে একটি প্রতিরক্ষা বলয় গঠিত হচ্ছে। জার্মান প্রেসিডেন্ট স্টেইনমায়ার বলেছেন, ‘আমরা দ্বিমুখী সংকটে আছি—রাশিয়ার আগ্রাসন এবং মার্কিন নেতৃত্বের বৈচিত্র্য।’
বিশ্বব্যবস্থা: এক নতুন বাস্তবতায় প্রবেশ
প্রচলিত বিশ্বযুদ্ধ মানেই ছিল রাষ্ট্র বনাম রাষ্ট্র, মিত্র ও শত্রু চিহ্নিত। কিন্তু আজকের যুদ্ধ ছায়াযুদ্ধ, সাইবার আক্রমণ, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক অস্ত্রায়নের মাধ্যমে পরিচালিত। দৃশ্যমান যুদ্ধ কম, কিন্তু সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী।
সুতরাং, যদিও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি, বাস্তবতা আমাদেরকে বলছে— আমরা হয়তো তার মধ্যেই আছি।
0 Comments