গাজায় হামলা বাড়াতে রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি ইসরাইলের

গাজায় নতুন করে হামলা জোরদারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। শনিবার দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই হাজার হাজার রিজার্ভ সদস্যকে সক্রিয় বাহিনীতে যোগ দিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। এই উদ্যোগ ইসরাইলের বড় ধরনের সামরিক অভিযানের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা সংঘাতকে আরও রক্তক্ষয়ী করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে (সূত্র: সিএনএন, এপি, রয়টার্স)।

ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই হাজারো রিজার্ভ সদস্যকে মোতায়েন করা হবে। তাদের গাজায় সরাসরি পাঠানো হতে পারে অথবা লেবানন, পশ্চিম তীর এবং সিরিয়ার সীমান্তে মোতায়েন করে মূল বাহিনীকে গাজা ফ্রন্টে কেন্দ্রীভূত করা হবে।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালকে ‘যুদ্ধের বছর’ ঘোষণা করেছে ইসরাইল। এ বছর সর্বমোট চার লাখ রিজার্ভ সেনাকে সক্রিয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বিশাল সংখ্যক কর্মীকে সেনাবাহিনীতে টানার কারণে শ্রমবাজারে চাপ বাড়ছে, অনেকেই চাকরি হারাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

গাজা ও সিরিয়ায় ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ৭ থেকে ১১ মে পর্যন্ত নির্ধারিত আজারবাইজান সফর স্থগিত করেছেন। সফর বাতিলের পরই নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজায় হামলার পরিধি সম্প্রসারণের অনুমোদন দিয়েছে।

রোববার গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরাইলি বিমান হামলায় নতুন করে অন্তত ৩৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় এক রাতের মধ্যে ছয়জন এবং পরে একই এলাকায় এক তাঁবুতে চালানো হামলায় আরও ১০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ছিলেন এক শিশু ও সাতজন নারী।

এএফপি জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী দাবি করেছে তারা গত দুই দিনে গাজায় ১০০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এই বাস্তবতায়, রিজার্ভ সেনা ডেকে এনে হামলা আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছে দেশটি।

তবে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের কারণে সেনাবাহিনীর ভেতরে ক্লান্তি ও হতাশা ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকে আবার রিজার্ভ ডিউটি এড়িয়ে চলার চেষ্টাও করছেন বলে খবরে উঠে এসেছে।

১৮ মার্চ, দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর গাজায় পুনরায় অভিযান শুরু করে ইসরাইল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ২,৪৩৬ জন নিহত হয়েছেন। পুরো যুদ্ধকালীন সময়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২,৫৩৫ জনে এবং আহত হয়েছেন আরও ১,১৮,৪৯১ জন।

ইসরাইল এই মুহূর্তে গাজায় মানবিক সহায়তা পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে। দেশটির দাবি, এই অবরোধের মাধ্যমে হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বন্দিদের মুক্তি আদায় করাই তাদের উদ্দেশ্য। তবে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে গাজায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাগুলোর ভাষ্য, সহায়তা অব্যাহত না থাকলে গাজায় শিগগিরই দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।